বছরের পর বছর
ব্যাংকে জমা পড়ে থাকা এমপিওর অব্যয়িত ৬১৪ কোটি টাকার মুনাফা খাওয়ার অপরাধে
ফেঁসে যাচ্ছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা অধিদপ্তর এবং চারটি ব্যাংকের
কয়েকজন কর্মকর্তা। টাকার অভাবে শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্ত করা যাচ্ছে
না বলে বছরের পর বছর দাবী করে আসলেও ৬১৪ কোটি টাকা গোপনে ফেলে রেখে মুনাফা
খাচ্ছিল এই চক্রটি। বছরের পর বছর এ টাকার লভ্যাংশ এ সিন্ডিকেট গিলে
খাচ্ছে। এ টাকা বিভিন্ন কারণে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের সরকারি বেতনের।
তবে নানা কারণে এ টাকা শিক্ষকরা তুলতে পারেননি। নিয়ম অনুযায়ী অব্যায়িত এ
অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা হওয়ার কথা। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও রাষ্ট্রীয়
চারটি ব্যাংকের একটি সিন্ডিকেট সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে বছরের পর বছর
লভ্যাংশ ভোগ করে আসছে।
২০১৪ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের সূত্র ধরে এমন ৬১৪ কোটি টাকা হদিস
পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে
বিষয়টি জানানো হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়কে। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর
শিক্ষাক্ষেত্রে বইছে আলোচনার ঝড়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ বিষয়টিকে
ক্রাইম হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
জরুরি ভিত্তিতে এই টাকা সরকারি কোষাগারে
জমা নিশ্চিত করা এবং ব্যাংক স্টেটমেন্ট ও অনিয়মের কারণ ব্যাখ্যাসহ অর্থ ও
শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে রিপোর্ট দিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর
(মাউশি)কে নির্দেশনা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। কোন ব্যাংকে কত টাকা পড়ে আছে
এবং এর লভ্যাংশ কোথায় যাচ্ছে তা জানতে তিন কর্মদিবস সময় দিয়েছে অর্থ
মন্ত্রণালয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মাউশির পরিচালক
(ফাইন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মোজাম্মেল হোসেন
চৌধুরী দৈনিকশিক্ষাডটকমকে বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠি পাওয়ার পর এই
টাকার খোঁজ নিতে মাউশির পরিচালকের (মাধ্যমিকের) কাছে পাঠানো হয়েছে।
গত ১২ই এপ্রিল প্রশাসনের পরিচালকের কাছে
পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে অর্থ
ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাউশির এমপিও খাতে
অব্যায়িত ৬১৩ কোটি ৯৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা নিশ্চিত করতে
হবে। একই সঙ্গে পূর্বের ব্যাংক স্টেটমেন্ট ও এ অনিয়মের কারণ ব্যাখ্যাসহ উভয়
মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট দিতে হবে। চিঠিতে আরো বলা হয়, গত ১০ই এপ্রিল অর্থ
মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিবের সভাপতিত্বে বাজেট বিষয়ক
ত্রিপক্ষীয় সভায় এই টাকা বাণিজ্যিক ব্যাংকে পড়ে থাকার কারণ জানতে চাওয়া হয়।
সভায় শিক্ষাসচিব উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বলা হয়, এটাকে গুরুত্বর ত্রুাইম বলে
উল্লেখ করে সিনিয়র সচিব মাউশির কাছে এই টাকা কেন এতদিন ব্যাংকে পড়ে আছে তার
ব্যাখ্যা চেয়ে তিন কর্মদিবস সময় বেঁধে দেয়। একই সঙ্গে এই অর্থ অগ্রাধিকার
ভিত্তিতে তদন্ত করে সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া এবং ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ
দেয়া হয়। এই চিঠি পাওয়ার পর মাউশিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে। পরিচালক পর্যায়ে
বৈঠক হয়েছে একাধিকবার। সেখানে এই অর্থ কোন ব্যাংকে কত টাকা আছে তা দ্রুত
বের করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন একজন পরিচালক
অভিযোগ করে বলেন, প্রতি বছর এমপিও খাতে যে টাকা অব্যায়িত থাকে তা জুনের
মধ্যে সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা দেয়া আছে। চারটি
ব্যাংকের মাধ্যমে এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দেয়া হয়। অব্যায়িত টাকা
প্রতি বছর সরকারি কোষাগারে জমা হওয়ার কথা।
এ ব্যাপারে মাউশির মহাপরিচালক প্রফেসর ড.
এস এম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, নানা কারণে শিক্ষকরা বেতন উঠাতে পারেন না। এই
টাকা ব্যাংকের আটকে থাকে। ওই অর্থ বছরের মধ্যে সমস্যার সমাধান করে যদি
ব্যাংকে যায় তবে ব্যাংক তাদের টাকা দিয়ে দেয়। না হয় অটোমেটিক সরকারি
কোষাগারে চলে যাওয়ার কথা। এটা নিশ্চিত করতে প্রতি বছর রাষ্ট্রীয় চারটি
ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয় এবং মাউশির সভা পর্যন্ত হয়। এখন এই টাকা
সরকারি কোষাগারে জমা হয় কী না তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব ব্যাংক কর্তৃপক্ষের।
বাংলাদেশ অধ্যক্ষ সমিতির সভাপতি
অধ্যাপক মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান বলেন, সরকারের টাকা
ব্যাংকের লুকিয়ে রেখে মুনাফা খায় কর্মকর্তারা আর টাকা নেই বলে হাজার হাজার
শিক্ষক নন-এমপিও খেকে যাচ্ছেন বছরের পর বছর। শিক্ষা প্রশাসনের এসব পদে
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের প্রেষণে অথবা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ না দেয়া পর্যন্ত
বেসরকারি শিক্ষকদের ভাগ্য উন্নয়ন হবে না।
সূত্রঃ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন