Sample Text

LightBlog

Breaking

LightBlog

শুক্রবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

আইসিটি ও নন এমপিও শিক্ষকদের প্রান্তিক ফরিয়াদ -বহুল প্রচলিত দৈনিক শিক্ষা অনলাইন পত্রিকার প্রচেষ্টাকে ধন্যবাদ

বহুল প্রচলিত দৈনিক শিক্ষা অনলাইন পত্রিকার প্রচেষ্টাকে ধন্যবাদ যে তারা আইসিটি ও নন-এমপিও ‍শিক্ষকদের মানবেতর জীবন=যাপন সকলের দৃষ্টিগোচর করার জন্য প্রাণ-পন চেষ্টা করছে।


আমাদের শিক্ষায় অনেক অনেক সাফল্য। আমরা ছোটবেলায় শ্লেট পেন্সিলের সাহায্যে লেখা শিখেছি । আজকাল শ্লেট-পেন্সিল প্রায় উঠেই গিয়েছে । শুনেছি , এর আগে কলা পাতায় নল-খাগড়ার কলম দিয়ে লেখা শেখানো হতো। ক’জন ছেলে মেয়ে এখন শ্লেট-পেন্সিল কিংবা নল-খাগড়ার কলম চেনে ? সেদিন আর খুব দূরে নেই-যেদিন বই,খাতা আর কলমের সময় ফুরিয়ে যাবে । মানুষ আর নিজের হাত দিয়ে লিখবেনা। কী-বোর্ডের সাহায্যে কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপে টাইপ করে দ্রুত প্রিন্টারের সাহায্যে ছাপিয়ে নেবে।চালু হবে ই-বুক । ইন্টারনেট, ওয়েব কিংবা লিংকে ক্লিক করে কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপের মনিটরে পড়া যাবে বই । পকেটে কলমের পরিবর্তে শোভা পাবে পেন ড্রাইভ । এখন অনেকটা এভাবেই শুরু হয়ে গেছে ।
চারদিকে বদলে যাবার ও বদলে দেবার প্রতিশ্রুতি । সে প্রতিযোগিতায় আমরা ও পিছিয়ে নেই। প্রতিটি স্কুল-কলেজে সুন্দর সুন্দর দালান-বিল্ডিং হয়েছে । মাল্টি মিডিয়া ক্লাসরুম হয়েছে । বহু স্কুল-কলেজে ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাব বসানো হয়েছে । জাতির জনকের কনিষ্ট শিশুপুত্র শহীদ শেখ রাসেলের নামে এ সব ল্যাব স্থাপিত হওয়ায় জাতি কিছুটা হলে ও দায়মুক্ত হয়েছে এবং তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ে আমাদের আগ্রহ অনেক বেড়েছে । সরকার শিক্ষার্থীদের বইয়ের পরিবর্তে ই-বুক ব্যবহারের জন্য ট্যাব তুলে দেবার আয়োজন করছে । প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শত ভাগ শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেয়া হচ্ছে । আগামী দিনগুলোতে হয়ত সকল স্তরের সব ছাত্র-ছাত্রী উপবৃত্তি পাবে । আজ থেকে দশ বছর আগে আমাদের শিক্ষায় পারিপার্শ্বিক ও অবকাঠামোগত যে দৈন্যদশা ছিল , তা আর এখন নেই । অজো পাড়া গাঁয়ের শিক্ষার্থীরা পর্যন্ত স্কুল-ব্যাজ ও ইউনিফর্ম পরে স্কুলে যাওয়া আসা করে । লুঙ্গি-স্যান্ডেল পরে এখন আর কোন শিক্ষক প্রাইমারি স্কুলে পর্যন্ত যান না । দল বেঁধে গ্রামের মেয়েরা ও হৈ-হুল্লোড় করে স্কুল-কলেজে যায় । এ সব দৃশ্য এই তো মাত্র ক’ বছর থেকে । আমাদের প্রতিবেশী অনেক দেশ থেকে এ সব বিষয়ে আমরা এখন আর পিছিয়ে নেই বরং কোন কোন ক্ষেত্রে এগিয়ে ।
বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে আইসিটি শিক্ষাই আসল শিক্ষা বলে গন্য হতে শুরু করেছে । সেদিন আর খুব দূরে নয়, যেদিন আইসিটিতে যারা অজ্ঞ তাদের অশিক্ষিত কিংবা নিরক্ষর ধরা হবে । তাই আমাদের সরকার প্রথমে নবম শ্রেণি থেকে কম্পিউটার বিষয়টিকে ঐচ্ছিক করলে ও পরবর্তীতে এর গুরুত্ব অনুধাবন করে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে আইসিটিকে (কম্পিউটার বিষয়টিকে এখন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বা সংক্ষেপে আইসিটি বলা হয়) আবশ্যিক করেছে। এটি আমাদের সরকারের অতিশয় দূরদর্শিতার পরিচায়ক-তাতে সন্দেহ নেই।
কিন্তু, একটি বিষয় বোধগম্য নয় যে- আইসিটি শিক্ষকদের গুরুত্ব না দিয়ে কিভাবে আইসিটি শিক্ষার সফলতা সম্ভব ? অনেক স্কুল-কলেজে আইসিটি শিক্ষকের পদ শুন্য । আবার বহু সংখ্যক স্কুল-কলেজে আইসিটি শিক্ষকের এমপিও নেই। তারা বেতন ছাড়া কাজ করেন। তাদের কী পেট-পীঠ নেই ? তাদের স্বামী/স্ত্রী কিংবা সন্তান সন্ততি নেই ? নেই ভাই-বোন ও পিতা-মাতা? তাদের কী আবেগ-অনুভূতি, ইচ্ছা-অনিচ্ছা,প্রেম-ভালবাসা নেই ? তারা কী উৎসব-আনন্দ উদযাপন করেন না ? উত্তর যদি ‘আছে’ এবং ‘ হ্যাঁ ‘ হয়ে থাকে, তবে তাদের সাথে এ কেমন দুর্ব্যবহার? তাদের কেন পরিবার- পরিজনের বোঝা বানিয়ে রাখা হয়েছে ? ১৩-১১-১১ তারিখের কালো প্রজ্ঞাপনটি কেন তাদের বুকের ওপর জগদ্দল পাথরের মত বসিয় রাখা হয়েছে ? এ পাথরের চাপে কেবল তারা নন , তাদের পরিবারের লোকজন ও কষ্টে নিঃশ্বাসটুকু ফেলতে পারছেন না । দম বন্ধ হয়ে মরে যাবার উপক্রম । আইসিটির মত কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি যারা পড়াবেন, তাদের ডাবল বেতন দিলে ও কম হয়। আমাদের কৃষি শিক্ষা ও গ্রন্থাগার বিষয়ে নিয়োগ প্রাপ্তরা শুরুতেই সিনিয়র স্কেল পেয়ে যান । আইসিটি তো বর্তমান সময়ে সব বিষয় থেকে অনেক বেশী গুরুত্ব বহন করে। অনেক আইসিটি শিক্ষক ৪/৫ বছর ধরে বিনা বেতনে শিক্ষকতা করে যাচ্ছেন । তারা না-খেয়ে, পরিবার-পরিজনকে উপোস রেখে আর কতদিন বেঁচে থাকবেন ? নাকি তাদের এ ভাবেই পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্ট ভোগ করে করে একদিন নিঃশেষ হতে হবে ?
যে জাতির শিক্ষকরা মর্যাদা নিয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারেনা , সে জাতি মর্যাদাবান হয় কী করে ?
দেশে প্রায় আট হাজার শিক্ষা প্রতিষ্টানের এমপিও নেই । এ সব প্রতিষ্টানের কেবল শিক্ষকরা নয়,শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা পর্যন্ত অনেক কষ্টের মাঝে আছেন । এ জাতীয় স্কুল-কলেজে কমবেশী এক লক্ষ শিক্ষক-কর্মচারী । তাদের এক লক্ষ পরিবারে কয়েক লক্ষ পোষ্য মানুষ। এ সব প্রতিষ্ঠানের কোন কোনটি দশ-কুড়ি বছর বছর ধরে এ ভাবেই চলছে । বিনা বেতনে অন্ততঃ মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকাটা নন এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য আজ যেন কষ্টের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে । ‘শিক্ষকতা মহৎ পেশা -শিক্ষক জাতির মহান কারিগর’ এ জাতীয় কথা শুনেই তো একটু মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য এরা বড় আগ্রহ নিয়ে শিক্ষকতা পেশায় প্রবেশ করেছিলেন । কিন্তু, এখন কী পাচ্ছেন তারা ?
পৃথিবীর অনেক দেশে শিক্ষকরা ভি,আই,পি মর্যাদা পান-সে তিনি যে স্তরের শিক্ষক হোন না কেন । ভি,আই,পি’রা সর্বদা প্রথম শ্রেণি। কিন্তু, আমাদের এ দেশে শিক্ষকদের মর্যাদা কোন স্তরে ? সরকারি হাই স্কুলের শিক্ষকগণ দ্বিতীয় শ্রেণি। প্রাইমারির হেড স্যারেরা দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদার জন্য লড়াই করছেন। বেসরকারি স্কুল-কলেজের স্যারদের তো কোন শ্রেণিই নেই। নন এমপিও শিক্ষকদের মর্যাদা বা শ্রেণির কথা বাদ দিলাম। রাষ্ট্র তাদের বউ-বাচ্চা আর বৃদ্ধ বাবা-মা সহ তিন বেলা অন্ততঃ ডাল-ভাত খাবার সুযোগটা করে না দিলে সরকার বা রাষ্ট্রের ও তো কোন শ্রেণি বা মর্যাদা থাকে না। পৃথিবীর কোন দেশে শিক্ষকরা বিনা বেতনে চাকুরী করেন-সে তো কোনদিন শুনিনি। স্বাধীনতার সুদীর্ঘ চার যুগ পরে ও আমাদের দেশে এখনো তা-ই হচ্ছে। এ আমাদের জাতির দূর্ণাম । এ আমাদের রাষ্ট্রের কলংক । সরকারের বদনাম ।
আমরা মাত্র নয় মাসে দেশ স্বাধীন করেছি । জাতির জনকের হত্যাকারীদের বিচার করেছি এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলমান অবস্থায় এখন শেষ প্রান্তে । দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ আজ বিশ্বে রোল মডেল । স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাস্তবতার একেবার কাছাকাছি । এত সব অসম্ভবকে সম্ভব করতে পেরেছে পৃথিবীর ক’টি দেশ ?
তাহলে, আমরা কেন পারব না আমাদের দেশে শিক্ষকদের ভি,আই,পি মর্যাদা দিতে ? আমাদের প্রতিবেশী দেশ গুলো যদি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের ৫০/৬০ হাজার টাকা করে বেতন দিতে পারে, তবে আমাদের শিক্ষকরা বিনা বেতনে চাকরী করবেন কেন ? উপোস-ক্ষুধার্ত মানুষ দিয়ে কোন কাজ করানো যেমন সম্ভব নয়, তেমনি ঠিক ও নয়। শিক্ষকতার মতো কঠিন কাজ দুশ্চিন্তা ও দুর্ভাবনা মাথায় রেখে কেউ সঠিক ভাবে সম্পাদন করতে পারে না।
তাই, কাল বিলম্ব না করে আইসিটি ও নন এমপিও শিক্ষকদের এমপিও প্রদান করে অতি সত্বর সকল স্কুল-কলেজ একত্রে জাতীয়করণ করার সবিনয় অনুরোধ জানাই ।
লেখক : অধ্যক্ষ, চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কানাইঘাট, সিলেট

সূত্রঃ দৈনিক শিক্ষা

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Adbox