বর্তমানে যারা নবম শ্রেণীতে পড়ছে তাদের
থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। অর্থাৎ এসএসসিতে ২০১৯ সাল থেকে কার্যকর
হবে। তবে এসব বিষয় স্কুল-মাদ্রাসায় পড়ানো হবে। স্কুল পর্যায়ে পরীক্ষাও নেয়া
হবে। পরীক্ষার নম্বর যাবে বোর্ডে, প্রাপ্ত নম্বর জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট
(জেডিসি) ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) এবং এসএসসি ও দাখিল
পরীক্ষায় শিক্ষার্থীর ট্রান্সক্রিপ্টে উল্লেখ থাকবে। কিন্তু ওই নম্বর
পরীক্ষার ফলাফলে প্রভাব ফেলবে না।
বুধবার (২২ মার্চ) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে
অনুষ্ঠিত জাতীয় পাঠ্যক্রম সমন্বয় কমিটির (এনসিসিসি) সভায় এসব সিদ্ধান্ত
নেয়া হয়েছে। সভায় নবম-দশম শ্রেণীর পাঠ্যসূচিও চূড়ান্ত করা হয়।
মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা
বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক) চৌধুরী মুফাদ আহমদ সাংবাদিকদের বলেন,
পাবলিক পরীক্ষায় বিষয়ের আধিক্য কমানোর অংশ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের সুপারিশেও ছিল বিষয়টি। তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে
জেএসসি-এসএসসির মতো বড় পরীক্ষা গ্রহণের সময়সীমা কমে আসবে। লেখাপড়ার
পরীক্ষামুখিতা কমবে। শিক্ষার্থীদের শেখার ওপর গুরুত্বারোপ হবে।
স্কুলভিত্তিক মূল্যায়ন বাড়বে।
এ ব্যাপারে বৈঠকের একজন সদস্য বলেন, চারু ও
কারুকলা বিষয়টি নবম-দশম শ্রেণীতে অপশনাল। পদার্থ, রসায়ন বা অর্থনীতি,
পৌরনীতির মতো বিষয়ের বিকল্প হিসেবে নেয়া হয়। এমন বিকল্প বিষয়ের পরীক্ষা
কেন্দ্রীয়ভাবে নেয়া হয়ে থাকে। তাই এসএসসি পর্যায়ে এটি বাদ দেয়া হয়নি।
জানা গেছে, জেএসসি-জেডিসিতে এ তিনটি
বিষয়ের ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে ৫০ নম্বরের মধ্যে। এর মধ্যে শারীরিক শিক্ষা
এবং চারু ও কারুকলার ২০ নম্বর তত্ত্বীয় ও ৩০ নম্বর ব্যবহারিক হবে। আর কর্ম ও
জীবনমুখী শিক্ষায় ৩০ নম্বর তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক ২০ নম্বর হবে। এসব বিষয়ে
শ্রেণীর কাজ ১৫ (মৌখিক ও লিখিত পরীক্ষা এবং ক্লাস উপস্থিতি ৫ নম্বর করে),
শ্রেণূ অভীক্ষা ২০ (এমসিকিউ ও রচনামূলক ১০ করে) এবং বাড়ির কাজ ও
অনুসন্ধানমূলক কাজ (অ্যাসাইনমেন্ট ও অনুশীলন) ১৫ নম্বরের মধ্যে হবে। আর
এসএসসিতে শারীরিক শিক্ষা এবং ক্যারিয়ার শিক্ষার পরীক্ষা আগের মতোই ১০
নম্বরে নেয়া হবে। এগুলোও শ্রেণীর কাজ, বাড়ির কাজ এবং শ্রেণী অভীক্ষা হিসেবে
ভাগ করা হবে।
পাঠ্যসূচি : সভায়
নবম-দশম শ্রেণীতে নতুন পাঠ্যসূচিও নির্ধারণ করা হয়। গত বছর পর্যন্ত
পাঠ্যতালিকায় থাকা বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের নিরীহ বাঙালি, রবীন্দ্র
নাথ ঠাকুরের দেনা-পাওনা, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের পালামৌ, ভারতচন্দ্র
রায়গুনাকরের আমার সন্তান, রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের প্রাণ, যতীন্দ্র মোহন
বাগচীর অন্ধ বধূ, ফররুখ আহমেদের বৃষ্টি বাদ পড়েছে। এর মধ্যে প্রথম তিনটি
প্রবন্ধ-গল্প এবং পরের চারটি কবিতা।
এগুলোর পরিবর্তে এসেছে মুহম্মদ
শহীদুল্লাহর পল্লী সাহিত্য, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সুভা, সৈয়দ মুজতবা আলীর
প্রবাস বন্ধু, হুমায়ূন আহমেদের নিয়তি, আবদুল হাকিমের বঙ্গবাণী, রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুরের জুতা আবিষ্কার, সুকান্ত ভট্টাচার্যের রানার এবং সিকান্দার আবু
জাফরের আশা। এর মধ্যে প্রথম চারটি প্রবন্ধ-গল্প-আত্মকথা এবং পরের চারটি
কবিতা। নবম শ্রেণীর বাংলা প্রথমপত্রে মোট ৩১টি গদ্য ও ৩২টি পদ্য রয়েছে। এর
মধ্যে মোট ১৫টি কবিতা, ৭টি প্রবন্ধ-আত্মকথা, ৫টি গল্প এবং ৩টি উপন্যাস-নাটক
পাঠ্য হিসেবে পড়তে হবে। পরে চূড়ান্তভাবে এসএসসি-দাখিল পরীক্ষায় এ
পাঠ্যসূচির ওপর করা প্রশ্নপত্রে পরীক্ষায় অংশ নেয় শিক্ষার্থীরা।
সভায় সভাপতিত্ব করেন মাধ্যমিক ও
উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন। এতে এনসিসিসির প্রায় সব সদস্য
উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উপস্থিত একটি বোর্ডের সদস্য নাম প্রকাশ না করে বলেন,
প্রতি তিন বছর পরপর বাংলার পাঠ্যসূচিতে পরিবর্তন আনা হয়। ২০১৩ সালে নবম-দশম
শ্রেণীর পাঠ্য এসব পরিবর্তন করা হয়। জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড
(এনসিটিবি) যেভাবে উপস্থাপন করেছে, এনসিসিসি সেভাবে পাস করে দিয়েছে।
সূত্রঃ দৈনিক শিক্ষা
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন