ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য দেওয়া পাঁচটি বই
কমিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে পরীক্ষাও কমবে। দুটি বিষয়ের
মূল্যায়ন হবে বিদ্যালয় পর্যায়ে। ২০১৯ সাল থেকে এই সিদ্ধান্ত পর্যায়ক্রমে
বাস্তবায়ন করা হবে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে (এনসিটিবি) সম্প্রতি প্রাথমিক ও
গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এক
সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আগামী বছর থেকে বই কমানোর চিন্তাভাবনা থাকলেও জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে
প্রাথমিক শিক্ষা এখনো অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত না হওয়ায় ২০১৯ সাল থেকে এই
সিদ্ধান্ত পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। কারণ, তাঁরা আশা করছেন,
এই সময়ের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত হয়ে
যাবে। প্রাথমিক স্তর অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত না হলেও ওই সিদ্ধান্তের আলোকে ওই
সব শ্রেণির বই কমাতে কোনো বাধা নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন বলেন,
বই ও পরীক্ষা কমবে—এটা মোটামুটি চূড়ান্ত। কয়েকটি বিষয়ে চূড়ান্ত পরীক্ষা হবে
না। এগুলো বিদ্যালয় পর্যায়ে ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে। এটা শিক্ষাবিদদের
সমন্বয়ে গঠিত কমিটির সুপারিশের আলোকে চূড়ান্ত করা হবে।
বর্তমানে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ওঠা শিশুদের হাতে ১৩টি বিষয়ে ১৪টি বই তুলে দেওয়া
হচ্ছে। এসব বই দিচ্ছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
অভিযোগ উঠেছে, পঞ্চম শ্রেণিতে যেখানে শিশুরা ৬টি বই পড়ছে, সেখানে মাত্র
কয়েক দিনের ব্যবধানে এক লাফে ১৪টি বই দেওয়ায় শিশুদের ওপর চাপ পড়ছে। চাপ
সামলাতে বাধ্য হয়ে কোচিং-প্রাইভেটমুখী হচ্ছে শিক্ষার্থীরা, হাতে তুলে
নিচ্ছে সহায়ক বই, যা নোট-গাইডের মতো বিকল্প।
এনসিটিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, শিক্ষানীতির আলোকে প্রাথমিক শিক্ষা
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গঠিত উপদেষ্টা কমিটি গত ২৩
নভেম্বর এক সভায় মিলিত হয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব মোহাম্মদ আসিফ-উজ
জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব
চৌধুরী মুফাদ আহমদসহ কয়েকজন শিক্ষাবিদও উপস্থিত ছিলেন। সেখানেই বই কমানোর
সিদ্ধান্ত হয়।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত চারুপাঠ এবং ব্যাকরণ ও
নির্মিতি বই একত্র করে ‘আমার বাংলা বই’ নামে একটি বই থাকবে। এর মোট নম্বর
হবে ১০০। বিদ্যমান আনন্দ পাঠ বই থাকবে না। তবে ব্যাকরণচর্চার জন্য ‘আমার
বাংলা বই: অনুশীলন’ নামে অনুশীলন বই থাকবে।
বর্তমানে এসব শ্রেণিতে চারুপাঠ (১০০ নম্বর), আনন্দপাঠ এবং ব্যাকরণ ও
নির্মিতি (৫০ নম্বর) নামে মোট তিনটি পাঠ্যবই পড়ানো হয়। এগুলোর ওপর দুই
পত্রে ১৫০ নম্বরের পরীক্ষা হয়।
ইংরেজিতে ইংলিশ ফর টুডে ও ইংলিশ গ্রামার একত্র করে ‘ইংলিশ ফর টুডে’ নামে
একটি বই থাকবে। এর নম্বরও ১০০ হবে। তবে এ বিষয়েও ‘ইংলিশ ফর টুডে:
এক্সসারসাইজ’ নামে গ্রামার-চর্চার একটি অনুশীলন বই থাকবে।
কর্ম ও জীবনমুখী, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান এবং কৃষিশিক্ষা বইগুলো সমন্বয় করে
‘কর্মমুখী শিক্ষা’ নামে একটি পাঠ্যবই রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই
বিষয়ের মোট নম্বর হবে ১০০। চারু ও কারুকলা পাঠ্যবইয়ের পরিবর্তে প্রতি
শ্রেণির জন্য ৫০ নম্বরের শিক্ষক নির্দেশিকা প্রবর্তন করা হবে এবং বিদ্যালয়
পর্যায়ে ধারাবাহিক মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে শেখানো
নিশ্চিত করা হবে। ৫০ নম্বরের শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নামে একটি বই
থাকলেও এ বিষয়েও চূড়ান্ত পরীক্ষা হবে না। বিদ্যালয় পর্যায়ে ধারাবাহিক
মূল্যায়ন হবে।
গণিত, আমার বাংলাদেশ ও বিশ্ব, বিজ্ঞান, ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বই ও নম্বর
বর্তমানের মতো প্রতিটিতে ১০০ নম্বর থাকবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ের
বই বর্তমানের মতোই একটি করে থাকবে এবং নম্বর হবে ৫০। প্রথম থেকে অষ্টম
শ্রেণি পর্যন্ত কোনো ঐচ্ছিক বিষয় থাকবে না।
জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা
বলেন, তাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখন প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণি
পর্যন্ত হলে এটা কার্যকর করা হবে।
সূত্রঃ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন